বাংলাদেশ

কাল দুদকে হাজির হবেন না বেনজীর, চেয়েছেন সময়

প্রথম দফায়ই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ডাকে সাড়া দেননি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। কিন্তু আজ বুধবার জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে তিনি ১৫ দিনের সময় চেয়ে আবেদন করেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এই সময় আবেদন করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান টিমের প্রধান উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের বরাবর এই আবেদন করা হয়েছে। বেনজীরের এই সময় আবেদন মঞ্জুর করা হবে। দুদক সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, শুনতে পেরেছি তিনি (বেনজীর আহমেদ) আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেছেন।

তিনি ১৫ দিন সময় চাইতে পারেন।

এক প্রশ্নের জবাতে তিনি বলেন, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সন্তুষ্ট হলে সময় দিতে পারেন। এটা কমিশনের ব্যাপার না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, তিনি (বেনজীর আহেমদ) দেশে আছেন, নাকি বিদেশ গেছেন তা আমরা জানি না।

কোনো নির্ভরযোগ্য সোর্স থেকে তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।

এর আগে গত ২৮ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মীর্জাসহ তাদের দুই মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদ এবং ৯ জুন তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। তবে আরেক মেয়ে জাহরা জেরিন বিনতে বেনজীর অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে তলব করা হয়নি।

এরও আগে গত ২৪ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন।

একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ২৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট), ক্রেডিট কার্ড চারটি ও ছয়টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে একই আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সাভারের কিছু জমিও রয়েছে একই আদেশের মধ্যে।

জব্দ হয়নি বেনজীর দম্পতির দুই বাড়ি

বেনজীর আহমেদের নামে রাজধানীর ভাটারায় পাঁচ তলা ও স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে উত্তরায় সাত তলা বাড়ি জব্দে আইনি বাধা না থাকলেও দুদক সময়ক্ষেপণ করছে। ইতোমধ্যে বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দে আদালতে আবেদন হয়েছে। কিন্তু উত্তরা ও ভাটারার বাড়ি জব্দে অদ্যাবধি দুদক কোনো আবেদন করেনি।

সূত্র জানায়, উত্তরার অভিজাত এবং গুলশান-২-এর ডিপ্লোমেটিক জোন লাগোয়া আলিশান বাড়ি দুটি নির্মাণে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে তিন কাঠা প্লটে উত্তরার বাড়ি নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়নের সঙ্গে বেনজীর স্ত্রীর নামে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ভাটারার বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

সূত্র আরো জানায়, উত্তরার বাড়ির সব তথ্য দুদক সংগ্রহ করেছে। এখন এটি জব্দের আবেদন করতে কোনো অসুবিধা নেই। যদিও ভাটারার বাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি। জানা যায়, দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়ার পরপরই ভাটারার বাড়ি বিক্রি করেছেন বেনজীর। তবে এটি আদৌ তিনি বিক্রি করেছেন কিনা, বিক্রি হলে কার কাছে, কত টাকায় তা সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক।

Related Posts